এম.আর মাহামুদঃ
‘কবি সুকান্ত’ তার কবিতায় যথার্থই বলেছেন, ‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়’ পুর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি। কবিতার যথার্থতা সর্বস্তরের মানুষ খুজে পেয়েছে গেল বছর ও চলতি বছরের চলমান লকডাউনে। লকডাউন এখনো চলছে, হয়তো লকডাউনের পরিধি আরো বাড়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায়না। কারণ করোনা মাহামারী দিন দিন বাড়ছে বৈ কমছেনা। গেল বছর লকডাউন চলাকালে মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও হতদরিদ্ররা সরকারী বেসরকারী সাহায্য সহযোগিতা পেয়েছে, কিন্তু চলতি লকডাউনে সেই লক্ষণ পরিলক্ষিত হচ্ছেনা। সবজায়গায় চলছে আহাজারী। গেল জুনের শেষ সপ্তাহ জুড়ে করোনা মাহামারী আবার মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ফলে বাধ্য হয়ে সরকার মানুষের জীবন রক্ষার স্বার্থে লকডাউন দিতে বাধ্য হয়েছে। গেল বছর থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। শিক্ষার্থীরা অনেকটা শিক্ষাবিমুখ হয়ে অলস ভাবে দিন কাটাচ্ছে। আবার কেউ কেউ অবসর সময়ে বিভিন্ন পেশায় জড়িয়ে পরিবার পরিজনের স্বার্থে জীবিকার ঘানি টানছে। গেল বছর করোনা মাহামারীর চলকালীন সময়েও গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা সচল রাখার স্বার্থে সরকার কৃষি পণ্যসহ গবাদি পশু বিক্রির প্রক্রিয় সচল রেখেছিল। জুলাইতে করোনা মাহামারী মারাত্মক আকার ধারণ করায় সরকার বাধ্য হয়ে ৭দিন কঠোর লকডাউন ঘোষণা করেছে। পুনরায় লকডাউন ৭ দিন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কথা হচ্ছে প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, মৃত্যুর সংখ্যাও গাণিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে লকডাউন বাস্তবায়ন করতে মাঠে নেমেছে প্রশাসন, পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনী। পণ্যবাহী গাড়ী চলাচল করছে। যাত্রীবাহী গাড়ীগুলো বন্ধ বললেই চলে। আল্লার অশেষ কৃপায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও মৃত্যুর সংখ্যা অনেকটাই কম। সেকারণে প্রশাসন রোগ-প্রতিরোধের জন্য কঠোর ভাবে লকডাউন বাস্তবায়নে সচেষ্ট। কিন্তু মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও হতদরিদ্র জনগোষ্ঠী বড়ই বেকায়দায়। কারা পারছেনা কইতে, পারছেনা সইতে। কর্মহীন অধিকাংশ মানুষ গৃহবন্ধী। অনেকে বাঁচার তাগিদে রাস্তায় নেমেও পড়ছে। কিন্তু প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নেকানি-চুকানি কপালে কম জুড়ছেনা। গেল বছরও করোনা চলাকালে কোরবানের ঈদ হয়েছে। গবাদী পশু যথানিয়মে স্বাস্থ্য বিধি মেনে বেছা-বিক্রি করেছে খামারী ও গবাদী পশুর মালিকেরা। চলতি বছরও কোরবানের ঈদে গবাদী পশু বিক্রি করার জন্য লালন পালন করেছে হাজার হাজার গবাদী পশু। এসব গবাদী পশুর মালিকের সংখ্যাও কম নয়। খামারী ও দরিদ্র গবাদী পশুর মালিকেরা গরু-মহিষ-ছাগল-ভেড়া লালন পালন করে ঈদুল আজহা (কোরবানীর সময়) বাজারে বিক্রি করে বিভিন্ন দায়-দেনা পরিশোধ ও পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করে থাকে, আবার অনেক কন্যা দায়গ্রস্থ পিতা বোন দায়গ্রস্থ ভাই গবাদী পশু বিক্রি করে বিবাহ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করে থাকে। তবে করোনা মহামারী চলাকালে ঝাকঝমক পুর্ণ বিয়ে অনুষ্ঠান না হলেও গ্রাম পর্যায়ে সরবে নিরবে বিবাহ সম্পন্ন হচ্ছে। কিছু “তীর্থের কাক” চরিত্রের মানুষ নিজস্ব ধান্দা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে গবাদী পশু বাজারে বিক্রি নিয়ে নানা কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়াচ্ছে। তাদের এসব কল্প কাহিনী পড়লে মনে হয় যেন, শুধু গরুর বাজার থেকেই করোনা ছড়ায়। কিন্তু সরকারী সিদ্ধান্ত হচ্ছে সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে বাজার বসবে, স্বাস্থ্য বিধি মেনে মানুষ কেনা-কাটা করবে। তাহলে গবাদী পশু নিয়ে এত কথা উঠার পিছনে কোন রহস্য রয়েছে। বিশেষ করে চকরিয়ার একটি পৌরসভাসহ ১৮টি ইউনিয়নে হাজার হাজার পবিার গরু-ছাগল-মহিষ-ভেড়া লালন পালন করেছে ঈদ বাজারে বিক্রি করার জন্য। তারা যদি প্রশাসনিক কোন সিদ্ধান্তের কারণে বাজারে গবাদী পশু বিক্রি করতে ব্যর্থ হয় তাহলে তাদের গবাদী পশুর ন্যায্য মুল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে। চকরিয়ায় শক্তিশালী একটি গবাদী পশুর চুরির সিন্ডিকেট রয়েছে ‘যা ওপেন সিক্রেট’। এ সিন্ডিকেটের হাতে পুরো উপকূলসহ চকরিয়ার সবকটি ইউনিয়নের গবাদী পশুর মালিকারা জিম্মি। গত ৩ মাসে অন্তত উপকূলীয় চিংড়ী জোন থেকে শতাধিক গবাদি পশু চুরি হয়েছে। সেকারণে অধিকাংশ গবাদী পশুর মালিক তাদের পালিত গবাদী পশু কোরবানের ঈদ বাজারে বিক্রির জন্য অপেক্ষা করছে। তবে একটি কথা না বললে হয়না মহাসড়কে গবাদী পশুর বাজার বসিয়ে বিক্রি করা যুক্তিসঙ্গত নয়, কারণ নানা দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায়না। চকরিয়ায় প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি আলোচিত বাজারে গবাদী পশুর হাট বসে। এসব বাজারে গবাদী পশু বিক্রি করতে না পারলে গবাদী পশুর মালিকেরা চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এক্ষেত্রে লাভবান হবে চোর-সিন্ডিকেট, তাদের জন্য আশির্বাদ হলেও গবাদী পশুর মালিকদের হবে সর্বনাশ। বিষয়টি জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের প্রতি সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছে সর্বস্তরের গবাদী পশুর মালিকেরা।
“লকডাউন বনাম ক্ষুধার রাজ্য”
পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।